এক দিন উঁচু-উঁচু গাছ ছিল কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশ এর পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থের ১২তম খণ্ডে রচিত। যা ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। গৌতম মিত্র ও ভূমেন্দ্র গুহ-এর সাথে যৌথ সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়। কবির অগ্রন্থিত কবিতাবলি নিয়ে প্রকাশিত কবিতা সংকলনগুলোর একটি হলো পাণ্ডুলিপি। এই গ্রন্থটি মোট ১৪টি খণ্ডে বিভক্ত রয়েছে।

এক দিন উঁচু-উঁচু গাছ ছিল
কবিতা: এক দিন উঁচু-উঁচু গাছ ছিল
কবির নাম: জীবনানন্দ দাশ
কবি: জীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থের নাম: পাণ্ডুলিপির কবিতা

এক দিন উঁচু-উঁচু গাছ ছিল পৃথিবীর বনের ভিতরে
প্রতিটি বৃক্ষের বুকে যেন এক ধীমান মানুষ
স্থির হয়ে রয়ে যেত- ত্রিকালের ঢের কথা জেনে
এ-সব গাছের কাঠে এক দিন ন্যূব্জ দরায়ুস
জাহাজ বানায়েছিল-
সমুদ্রের কামাতুর তরঙ্গের ফাঁদে প’ড়ে গিয়ে
সে-সব মেধাবী কাঠ মাস্তুলের মতো জেগে উঠে
ভারত মিশর উর টায়ার’এ হারিয়ে
নক্ষত্রের নিচে আজ রেখে গেছে সমুদ্রকে- অ্যাকুয়ামেরিন
লুপ্ত সব নগরীর উঁচু-উঁচু মিনারের প্রতিবিম্বময়
সর্বদাই ড্রেডনট জলে ডুবে গেলে
নক্ষত্রের বল-ঘেরা শ্বেত মিনারের জন্ম হয়
সমুদ্রের পারে তারা দাঁড়ায়েছে নিজের নিয়মে
পরস্পরের থেকে- বিভিন্ন মেঘের নিচে- দূরে
পায়রার মতো চাঁদ ধীরে-ধীরে প্রিয়তমা আর্দ্রা’র দিকে
উঠে যায় সেই সব পৃথিবীর রাত্রির দুপুরে
দীর্ঘ শরীরের নারী মিনারের ছাদে ছায়া ঘোরে
সেই স্থির আকাশের দিকে এক হলুদ লোষ্ট্রকে ছুঁড়ে দিয়ে
আলোকবর্ষের পথে দিয়ে দিত- প্রেমিকেরা জানে
বহু দিন সেই সব হাতযশ গিয়েছে হারিয়ে।

জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক৷ তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম৷ তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মিলে৷ জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।
মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন৷গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন৷