জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ – ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক৷ তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম৷ তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মিলে৷ জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।

মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন৷

 

মনবিহঙ্গম কাব্যগ্রন্থ । জীবনানন্দ দাশ

 

জীবনানন্দ দাশ

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন৷ বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন।

সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়৷ ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি৷

জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন৷ তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি৷ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন৷ বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তার প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে৷

 

জন্ম ও শৈশব:

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পূর্বপুরুষগণ বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর(বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) পরগণার কুমারভোগ নামক স্থানে “গাওপারা” গ্রামের নিবাসী ছিলেন যা পদ্মায় বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে৷ স্থানটি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত৷ তার পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৩৮-৮৫) বিক্রমপুর থেকে বরিশালে স্থানান্তরিত হন৷

সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন৷ তিনি বরিশালে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তার মানবহিতৈষী কাজের জন্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন৷ জীবনানন্দের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত সর্বানন্দের দ্বিতীয় পুত্র৷ সত্যানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৬৩-১৯৪২) ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, বরিশাল ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক এবং ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক৷

জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন গৃহিণী, কিন্তু তিনি কবিতা লিখতেন৷ তার সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) আজও শিশুশ্রেণির পাঠ্য৷ জীবনানন্দ ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান; তার ডাকনাম ছিল মিলু৷ তার ভাই অশোকানন্দ দাশ ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে এবং বোন সুচরিতা দাশ ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতা কম বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিরোধী ছিলেন বলে, বাড়িতে মায়ের কাছেই জীবনানন্দের বাল্যশিক্ষার সূত্রপাত৷

ভোরে ঘুম থেকে উঠেই পিতার কণ্ঠে উপনিষদ আবৃত্তি ও মায়ের গান শুনতেন৷ লাজুক স্বভাবের হলেও মিলুর খেলাধুলা, বাগান করা, ভ্রমণ ও সাঁতারের অভ্যাস ছিল৷ ছেলেবেলায় মামার সঙ্গে বহু জায়গায় বেড়িয়েছেন৷ শৈশবে একবার কঠিন অসুখে পড়েন৷ স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্যে মাতা ও মাতামহ হাসির গানের কবি চন্দ্রনাথের সাথে লক্ষ্মৌ, আগ্রা, দিল্লী প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেন৷ জন্মসূত্রে তার পদবি “দাশগুপ্ত” হলেও তিরিশের দশকের শুরুতে জীবনানন্দ “গুপ্ত” বর্জন করে কেবল দাশ লেখা শুরু করেন৷

 

শিক্ষাজীবন:

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে আট বছরের জীবনানন্দকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়৷ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন তার বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচনার সূচনা হয়৷ এছাড়া সে সময়ে তার ছবি আঁকার দিকেও ঝোঁক ছিল৷ ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ দু‘বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পূর্বের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটান; অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার উদ্দেশ্যে বরিশাল ত্যাগ করেন৷

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স সহ বিএ ডিগ্রি লাভ করেন৷ ওই বছরেই ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়৷ কবিতার নাম ছিল বর্ষ আবাহন৷ ওতে কবির নাম ছাপা হয়নি, কেবল সম্মানসূচক শ্রী কথাটি লেখা ছিল৷ তবে পত্রিকার বর্ষশেষের নির্ঘণ্টসূচিতে তার পূর্ণ নাম ছাপা হয়: শ্রীজীবনানন্দ দাস, বিএ৷

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন৷ তবে পরীক্ষার ঠিক আগেই তিনি রক্ত আমাশয় রোগে আক্রান্ত হন, যা তার প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত করে৷ সে সময়ে তিনি হ্যারিসন রোডের প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংয়ে থাকতেন৷ এরপর তিনি আইন বিষয়ে পড়া শুরু করেন, কিন্তু অচিরেই তা পরিত্যাগ করেন৷ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দ কলকাতার সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন৷

 

এই পথ দিয়ে । জীবনানন্দ দাশ । সুদর্শনা কাব্যগ্রন্থ,১৯৭৩

 

সাহিত্যচর্চা ও জীবনসংগ্রাম:

যৌবনের প্রারম্ভেই জীবনানন্দের কবিপ্রতিভা বিকশিত হতে শুরু করে৷ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৫ এর জুনে মৃত্যুবরণ করলে জীবনানন্দ তার স্মরণে ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ নামক একটি ব্রাহ্মবাদী কবিতা রচনা করেন, যা বঙ্গবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়৷ কবিতাটি পরবর্তীতে তার প্রথম কাব্য সংকলন ঝরা পালকে স্থান করে নেয়৷ কবিতাটি পড়ে কবি কালিদাস রায় মন্তব্য করেছিলেন, “এ ব্রাহ্মবাদী কবিতাটি নিশ্চয়ই কোনো প্রতিষ্ঠিত কবির ছদ্মনামে রচনা”৷

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দেই তার প্রথম প্রবন্ধ স্বর্গীয় কালীমোহন দাশের শ্রাদ্ধবাসরে প্রবন্ধটি ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার পরপর তিনটি সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়৷ ঐ বছরেই কল্লোল পত্রিকায় ‘নীলিমা’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে তা অনেক তরুণ কাব্যরসিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ ধীরে ধীরে কলকাতা, ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গার বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকায় তার লেখা ছাপা হতে থাকে; যেগুলির মধ্যে ছিল সে সময়কার সুবিখ্যাত পত্রিকা কল্লোল, কালিকলম, প্রগতি প্রভৃতি৷ ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক প্রকাশিত হয়৷ সে সময় থেকেই তিনি তার পারিবারিক উপাধি ‘দাশগুপ্তের’ বদলে কেবল ‘দাশ’ লিখতে শুরু করেন৷

প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের কয়েক মাসের মাথাতেই তিনি সিটি কলেজে তার চাকরিটি হারান৷ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে কলেজটিতে ছাত্র অসন্তোষ দেখা দেয়, ফলাফলস্বরূপ কলেজটির ছাত্রভর্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়৷ জীবনানন্দ ছিলেন কলেজটির শিক্ষকদের মধ্যে কনিষ্ঠতম; আর্থিক সমস্যাগ্রস্ত কলেজ প্রথমে তাঁকেই চাকরিচ্যুত করে৷ এই চাকরিচ্যুতি দীর্ঘকাল জীবনানন্দের মনোবেদনার কারণ ছিল৷

কলকাতার সাহিত্যচক্রেও সে সময় তার কবিতা কঠিন সমালোচনার মুখোমুখি হয়৷ সে সময়কার প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস শনিবারের চিঠি পত্রিকায় তার রচনার নির্দয় সমালোচনায় প্রবৃত্ত হন৷ কলকাতায় করবার মতো কোনো কাজ ছিল না বলে কবি ছোট্ট শহর বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন৷ তবে মাত্র দুই মাস কুড়ি দিন পরেই তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন৷ এ সময় তিনি প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংয়ে থাকতেন৷

চাকরি না থাকায় এ সময় তিনি চরম আর্থিক দুর্দশায় পড়ে গিয়েছিলেন৷ জীবনধারণের জন্যে তিনি গৃহশিক্ষকরূপে কাজ করতেন, এবং লেখালিখি থেকে সামান্য কিছু রোজগার হতো৷ সাথে সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরির সন্ধান করছিলেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে তিনি দিল্লির রামযশ কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এখানেও তার চাকরির মেয়াদ মাত্র চার মাস৷

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে তারিখে তিনি লাবণ্য দেবীর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ বিয়ে হয়েছিলো ঢাকা শহরে, পুরান ঢাকায় সদরঘাট সংলগ্ন ব্রাহ্ম সমাজের রামমোহন লাইব্রেরিতে। লাবণ্য গুপ্ত সে সময় ঢাকার ইডেন কলেজে লেখা-পড়া করছিলেন। জীবনানন্দ দাশের বিয়েতে কবি বুদ্ধদেব বসু, অজিতকুমার দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিয়ের পর আর তিনি দিল্লিতে ফিরে যাননি। এরপর প্রায় বছর পাঁচেক সময় জীবনানন্দ কর্মহীন অবস্থায় ছিলেন। মাঝে কিছু দিন একটি বীমা কোম্পানির অ্যাজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন; ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে অর্থ ধার করে ব্যবসা করেছেন; কিন্তু কোনোটাই স্থায়ী হয়নি। এ সময় তার পিতা জীবিত এবং জীবনান্দের স্ত্রী বরিশালেই ছিলেন বলে জীবনানন্দের বেকারত্ব পারিবারিক দুরবস্থার কারণ হয়নি।

১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে কবির প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রীর জন্ম হয়। প্রায় সে সময়েই তার ক্যাম্পে কবিতাটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সাথে সাথে তা কলকাতার সাহিত্যসমাজে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়। কবিতাটির আপাত বিষয়বস্তু ছিল জোছনা রাতে হরিণ শিকার। অনেকেই এই কবিতাটি পাঠ করে তা অশ্লীল হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তিনি তার বেকারত্ব, সংগ্রাম ও হতাশার এই সময়কালে বেশ কিছু ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছিলেন;- তবে তার জীবদ্দশায় সেগুলো প্রকাশ করেননি। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একগুচ্ছ গীতিকবিতা রচনা করেন যা পরবর্তী কালে তার রূপসী বাংলা কাব্যের প্রধান অংশ নির্মাণ করে। এ কবিতাগুলিও জীবনানন্দ প্রকাশ করেননি। ১৯৫৪-তে তার মৃত্যুর পর কবিতাগুলো একত্র করে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন তার বোন সুচরিতা দাশ এবং ময়ুখ পত্রিকা খ্যাত কবি ভূমেন্দ্র গুহ।

 

বরিশালে প্রত্যাবর্তন:

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দ তার পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজে ফিরে যান, যা তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। তিনি সেখানকার ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময়ে কলকাতায় বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সমর সেন একটি আনকোরা নতুন কবিতাপত্রিকা বের করার তোড়জোড় করছিলেন, যার নাম দেয়া হয় কবিতা। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাতেই জীবনানন্দের একটি কবিতা স্থান করে নেয়, যার নাম ছিল ‘মৃত্যুর আগে’।

কবিতাটি পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেবকে লেখা একটি চিঠিতে কবিতাটিকে ‘চিত্ররূপময়’ বলে মন্তব্য করেন। কবিতা পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাতে (পৌষ ১৩৪২ সংখ্যা; ডিসে ১৯৩৪/জানু ১৯৩৫) তার কিংবদন্তিসম বনলতা সেন কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এই ১৮ লাইনের কবিতাটি বর্তমানে বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার অন্যতম হিসেবে বিবেচিত। পরের বছর জীবনানন্দের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধূসর পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হয়। জীবনানন্দ এর মধ্যেই বরিশালে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলেন।

১৯৩৬-এর নভেম্বরে তার পুত্র সমরানন্দের জন্ম হয়। ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতা সংকলন সম্পাদনা করেন, যার নাম ছিল বাংলা কাব্য পরিচয় এবং এতে জীবনানন্দের মৃত্যুর আগে কবিতাটি স্থান পায়। ১৯৩৯ সালে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয় আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়; এতে জীবনানন্দের চারটি কবিতা – পাখিরা, শকুন, বনলতা সেন এবং নগ্ন নির্জন হাত অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৪২ সালে কবির পিতৃবিয়োগ হয় এবং ঐ বছরেই তার তৃতীয় কবিতাগ্রন্থ বনলতা সেন প্রকাশিত হয়। বইটি বুদ্ধদেব বসুর কবিতা ভবন হতে ‘এক পয়সায় একটি’ সিরিজের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং এর পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ষোলো। বুদ্ধদেব বসু ছিলেন জীবনানন্দের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং তার সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায় জীবনানন্দের বহু কবিতা ছাপা হয়। ১৯৪৪ সালে তার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ মহাপৃথিবী প্রকাশিত হয়। এর আগের তিনটি কাব্যগ্রন্থ তাঁকে নিজের পয়সায় প্রকাশ করতে হয়েছিল, তবে মহাপৃথিবীর জন্যে তিনি প্রকাশক পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে প্রকাশিত এই কবিতাগুচ্ছে যুদ্ধের ছাপ স্পষ্ট।

চাকরির প্রয়োজনে বরিশালে প্রত্যাবর্তন করলেও কলকাতা জীবনানন্দকে খুব টানতো। কলকাতার সুবিস্তৃত পরিসর তিনি উপভোগ করতেন। তিনি সর্বদাই কলকাতায় অভিবাসনের কথা ভাবতেন। সুযোগ পেলেই স্টিমারে বরিশাল থেকে খুলনা তারপর ট্রেনে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় পাড়ি জমাতেন।

 

পুনরায় কলকাতা গমন:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে। জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের জন্যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানান। এর ফলে বাংলা দ্বিখণ্ডিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, কারণ এর পূর্ব অংশ ছিল মুসলমান সংখ্যাপ্রধান আর পশ্চিমাংশে হিন্দুরা ছিল সংখ্যাগুরু। ১৯৪৭ এর দেশভাগ পূর্ববর্তী ঐ সময়টিতে বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিভৎসরূপে দেখা দেয়। জীবনানন্দ সব সময়ই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সপক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কলকাতায় যখন ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে আবার হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে কবি তখন লেখেন ১৯৪৬-৪৭ কবিতাটি। দেশবিভাগের কিছু আগে তিনি বি.এম. কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন।

ছুটি বাড়িয়ে কলকাতায় দীর্ঘ কয়েক মাস অবস্থান করেছেন। এরপর পূর্ববঙ্গে এসেছেন কিন্তু তা ছিল সাময়িক। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের কিছু পূর্বে সপরিবারে বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেন এবং কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

কলকাতায় তিনি ”দৈনিক স্বরাজ” পত্রিকার রোববারের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনা করেন। কিন্তু এই চাকুরির স্থায়ীত্ব ছিল ছিল মাত্র সাতমাস। কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক একটি গদ্য রচনা মালিক পক্ষের মনঃপুত না-হওয়ায় এই চাকুরিচ্যূতি। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আরো দুটি উপন্যাস লিখেছিলেন – ”মাল্যবান” ও ”সুতীর্থ”, তবে আগেরগুলোর মতো এ দুটিও অপ্রকাশিত রেখেছেন। এ বছরের ডিসেম্বরে তার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ সাতটি তারার তিমির প্রকাশিত হয়। একই মাসে কলকাতায় তার মাতা কুসুমকুমারী দাশের জীবনাবসান ঘটে।

ইতোমধ্যেই জীবনানন্দ কলকাতার সাহিত্যিক সমাজে নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করে নেন। তিনি ‘সমকালীন সাহিত্যকেন্দ্র’ নামে একটি সংস্থার সহসভাপতি নির্বাচিত হন এবং এই সংস্থার মুখপত্র দ্বন্দ্ব পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক নিযুক্ত হন। মাঝে তিনি কিছুকাল খড়গপুর কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তার জনপ্রিয় কবিতার বই বনলতা সেন সিগনেট প্রেস কর্তৃক পরিবর্ধিত আকারে প্রকাশিত হয়।

বইটি পাঠকানুকূল্য লাভ করে এবং নিখিল বঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন-কর্তৃক ঘোষিত “রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার” জয় করে। মৃত্যুর কিছু পূর্বে হাওড়া গার্লস কলেজ-এ অধ্যাপনার চাকুরি জুটে গেলে তার কলকাতা জীবনের অপরিসীম দৈন্যদশার সুরাহা হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

 

কর্মজীবন:

অধ্যাপনার কাজে তার কর্মজীবনের সূচনা ও সমাপ্তি। এমএ পাসের পর কলকাতায় কলেজের বোর্ডিংয়ে থাকার প্রয়োজন হলে তিনি আইন পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ পরিচালিত সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯২৮-এ সরস্বতী পূজা নিয়ে গোলযোগ শুরু হলে অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তাকেও ছাঁটাই করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। জীবনের শেষভাগে কিছুদিনের জন্য কলকাতার একটি দৈনিক পত্রিকা স্বরাজ-এর সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনায় নিযুক্ত ছিলেন।

অধ্যাপনা করেছেন বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যার মধ্যে আছে সিটি কলেজ, কলকাতা (১৯২২-১৯২৮), বাগেরহাট কলেজ, খুলনা (১৯২৯); রামযশ কলেজ, দিল্লী (১৯৩০-১৯৩১), ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল (১৯৩৫-১৯৪৮), খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২), বড়িশা কলেজ (অধুনা ‘বিবেকানন্দ কলেজ’, কলকাতা) (১৯৫৩) এবং হাওড়া গার্লস কলেজ, কলকাতা (১৯৫৩-১৯৫৪) তার কর্মজীবন আদৌ মসৃণ ছিল না। চাকরি তথা সুস্থির জীবিকার অভাব তাকে আমৃত্যু কষ্ট দিয়েছে।

একটি চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। স্ত্রী লাবণ্য দাশ স্কুলে শিক্ষকতা করে জীবিকার অভাব কিছুটা পুষিয়েছেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে অকাল মৃত্যুর সময় তিনি হাওড়া গার্লস কলেজ কর্মরত ছিলেন। দুই দফা দীর্ঘ বেকার জীবনে তিনি ইন্সুরেন্স কোম্পানীর এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন এবং প্রধানত গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালিয়েছেন। এছাড়া ব্যবসায়ের চেষ্টাও করেছিলেন বছরখানেক। দারিদ্র্য এবং অনটন ছিল তার কর্মজীবনের ছায়াসঙ্গী।

 

আলোপৃথিবী কবিতা । জীবনানন্দ দাশ । আলো পৃথিবী কাব্যগ্রন্থ,১৯৮১

 

ব্যক্তিগত জীবন:

জীবনানন্দ দাশ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে (বঙ্গাব্দ ১৩৩৭, ২৬শে বৈশাখ) ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে রোহিণীকুমার গুপ্তের কন্যা লাবণ্য গুপ্তকে বিয়ে করেন। তার কন্যা মঞ্জুশ্রী দাশ এবং পুত্র সমরানন্দ দাশ। অভিনয়শিল্পী অপর্ণা সেন সম্পর্কে তার ভাগ্নি হন। অপর্ণার মা সুপ্রিয়া দাশগুপ্ত ছিলেন সম্পর্কে খুড়তুতো বোন। অপর্ণা সেনরা কবিকে ‘বিলু মামা’ বলে ডাকতেন। অপর্ণার বাবা-মা তাকে বংশের বড় বলে ‘বড় দা’ বলে ডাকতেন।

 

সাহিত্যিক জীবন:

সম্ভবত মা কুসুমকুমারী দাশের প্রভাবেই ছেলেবেলায় পদ্য লিখতে শুরু করেন তিনি। ১৯১৯ সালে তার লেখা একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এটিই তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা। কবিতাটির নাম বর্ষা আবাহন। এটি ব্রহ্মবাদী পত্রিকার ১৩২৬ সনের বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। তখন তিনি শ্রী জীবনানন্দ দাশগুপ্ত নামে লিখতেন। ১৯২৭ সাল থেকে তিনি জীবনানন্দ দাশ নামে লিখতে শুরু করেন। ১৬ জুন ১৯২৫ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এর লোকান্তর হলে তিনি ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলেন যা বংগবাণী পত্রিকার ১৩৩২ সনের শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

তবে দীনেশরঞ্জন দাস সম্পাদিত কল্লোল পত্রিকায় ১৩৩২ (১৯২৬ খ্রি.) ফাল্গুন সংখ্যায় তার নীলিমা শীর্ষক কবিতাটি প্রকাশিত হলে আধুনিক বাংলা কবিতার ভুবনে তার অন্নপ্রাশন হয়। জীবদ্দশায় তার ৭টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রকাশিত ঝরাপালক শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে তার প্রকৃত কবিত্বশক্তি ফুটে ওঠেনি, বরং এতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মোহিতলাল মজুমদার ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রকট প্রভাব প্রত্যক্ষ হয়।

তবে দ্রুত তিনি স্বকীয়তা অর্জন করেছিলেন। দীর্ঘ ব্যবধানে প্রকাশিত দ্বিতীয় কাব্য সংকলন ধূসর পাণ্ডুলিপি-তে তার স্বকীয় কাব্য কৌশল পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। বাংলা সাহিত্যের ভূবনে তার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। শেষের দিককার কবিতায় অর্থনির্মলতার অভাব ছিল। সাতটি তারার তিমির প্রকাশিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুবোর্ধ্যতার অভিযোগ ওঠে। নিজ কবিতার অবমূল্যায়ন নিয়ে জীবনানন্দ খুব ভাবিত ছিলেন।

তিনি নিজেই স্বীয় রচনার অর্থায়ন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন যদিও শেষাবধি তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে কবি নিজেই নিজ রচনার কড়া সমালোচক ছিলেন। তাই সাড়ে আটশত কবিতার বেশি কবিতা লিখলেও তিনি জীবদ্দশায় মাত্র ২৬২টি কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও কাব্যসংকলনে প্রকাশ করতে দিয়েছিলেন।

এমনকি, রূপসী বাংলার সম্পূর্ণ প্রস্তুত পাণ্ডুলিপি তোরঙ্গে মজুদ থাকলেও তা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি জীবনানন্দ দাশ। তবে তিনি এ কাব্যগ্রন্থটির নাম দিয়েছিলেন বাংলার ত্রস্ত নীলিমা যা তার মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয় এবং রূপসী বাংলা প্রচ্ছদনামে প্রকাশিত হয়। আরেকটি পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয় মৃত্যু পরবর্তীকালে যা বেলা অবেলা কালবেলা নামে প্রকাশিত হয়।

জীবদ্দশায় তার একমাত্র পরিচয় ছিল কবি। অর্থের প্রয়োজনে তিনি কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন ও প্রকাশ করেছিলেন। তবে নিভৃতে গল্প এবং উপন্যাস লিখেছিলেন প্রচুর যার একটিও প্রকাশের ব্যবস্থা নেননি। এছাড়া ষাট-পঁয়ষট্টিটির বেশি খাতায় “লিটেরেরী নোটস” লিখেছিলেন যার অধিকাংশ এখনও (২০০৯) প্রকাশিত হয়নি।

সাহিত্যকৃতি:

জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থের তালিকা:

কাব্যগ্রন্থের শিরনাম বছর
ঝরা পালক ১৯২৭
ধূসর পাণ্ডুলিপি 1936
বনলতা সেন 1942
মহাপৃথিবী 1944
সাতটি তারার তিমির 1948
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা 1954
রূপসী বাংলা 1957
বেলা অবেলা কালবেলা 1961
সুদর্শনা 1973
জীবনানন্দ দাশের কবিতা 1974
মনবিহঙ্গম 1979
আলোপৃথিবী 1983
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা 1986
জীবনানন্দ দাশের কাব্যসংগ্রহ 1993
হে প্রেম তোমাকে ভেবে ভেবে 1998
অপ্রকাশিত একান্ন 1999
ছায়া আবছায়া 2004
পাণ্ডুলিপির কবিতা (১৪ খণ্ড) 2005
কৃষ্ণাদশমী 2015
অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ১ম খণ্ড 2015
অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ২য় খণ্ড 2016
সূর্য-অসূর্যলোক 2017
জীবনানন্দ দাশের দীর্ঘ কবিতা 2017

 

 

কথাসাহিত্য:

জীবদ্দশায় কথাসাহিত্যিক হিসাবে জীবনানন্দের কোনোও পরিচিতি ছিল না। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ অবধি প্রকাশিত তার রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ২১ এবং ছোটগল্পের সংখ্যা শতাধিক। তিনি সম্পূর্ণ নিভৃতে উপন্যাস-ছোটগল্প লিখেছিলেন এবং জীবদ্দশায় একটিও প্রকাশ করে যাননি। তার মৃত্যুর পর উপন্যাস-গল্পের পাণ্ডুলিপির খাতাগুলো আবিষ্কৃত হয়। কবিতায় যেমনি, কথাসাহিত্যেও তিনি তার পূর্বসূরীদের থেকে আলাদা, তার সমসাময়িকদের থেকেও তিনি সম্পূর্ণ আলাদা। তার গল্প-উপন্যাসে আত্মজৈবনিক উপাদানের ভিত লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তাই বলে এই রচনাগুলো আত্মজৈবনিক নয়। তার সর্বাধিক পরিচিত উপন্যাস মাল্যবান, তবে “মাল্যবান” তার বিরচিত প্রথম উপন্যাস নয়।

প্রকাশ শিরোনাম রচনাকাল
প্রকাশিত উপন্যাস মাল্যবান 1973
প্রকাশিত উপন্যাস সতীর্থ 1977
অপ্রকাশিত উপন্যাস পূর্ণিমা 1931
অপ্রকাশিত উপন্যাস করুবাসনা 1933
অপ্রকাশিত উপন্যাস নিরুপম যাত্রা 1933
অপ্রকাশিত উপন্যাস জীবনপ্রণালী 1933
অপ্রকাশিত উপন্যাস প্রেতিনীর রূপকথা 1933
অপ্রকাশিত উপন্যাস বিভা 1933
অপ্রকাশিত উপন্যাস জলপাইহাটি 1948
অপ্রকাশিত উপন্যাস বাসমতীর উপাখ্যান 1948
অপ্রকাশিত উপন্যাস সফলতা-নিষ্ফলতা 2005

 

গল্প:

জীবনানন্দ দাশের গল্প (১৯৭২, সম্পাদনা: সুকুমার ঘোষ, সুবিনয় মুস্তাফী)
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৮৯, সম্পাদনা: আবদুল মান্নান সৈয়দ)

 

প্রবন্ধ:

  • কবিতার কথা (১৯৫৬)
  • সমালোচনা সমগ্র (১৯৮৩, সম্পাদনা: আবদুল মান্নান সৈয়দ)
  • সমালোচনা সমগ্র (১৯৮৬, সম্পাদনা: আবদুল মান্নান সৈয়দ)

 

পত্রসংকলন:

  • জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলি (১৯৮৬, সম্পাদনা: আবদুল মান্নান সৈয়দ)

 

অন্যান্য:

  • জীবনানন্দ সমগ্র (১৯৮৫-১৯৯৩, ১-৮ খণ্ড, সম্পাদনা: দেবেশ রায়)

 

আরও দেখুনঃ

186 thoughts on “জীবনানন্দ দাশ”

Leave a Comment