যদিও রয়েছি বেঁচে । জীবনানন্দ দাশ । অপ্রকাশিত জীবনানন্দ,২০১৫

যদিও রয়েছি বেঁচে কবিতাটি অপ্রকাশিত জীবনানন্দ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ১ম খন্ড কবি জীবনানন্দ দাশ এর কাব্যগ্রন্থ যা ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়। গৌতম মিত্র -এর  সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়। কবির অগ্রন্থিত কবিতাবলি নিয়ে প্রকাশিত কবিতা সংকলনগুলোর একটি হলো অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ১ম খন্ড । এই গ্রন্থটি মোট ৩৬টি সতন্ত্র কবিতা রয়েছে।

 

যদিও রয়েছি বেঁচে । জীবনানন্দ দাশ । অপ্রকাশিত জীবনানন্দ,২০১৫

 

যদিও রয়েছি বেঁচে

কবিতা: যদিও রয়েছি বেঁচে
কবির নাম: জীবনানন্দ দাশ
কবি: জীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থের নাম: পাণ্ডুলিপির কবিতা

 

যদিও রয়েছি বেঁচে । জীবনানন্দ দাশ । অপ্রকাশিত জীবনানন্দ,২০১৫

 

যদিও রয়েছি বেঁচে ১৯৩৮-এ আজও মোরা-
তবু আমাদের জন্ম যেন হয়েছিল কোনও এক ধূসর শতকে- মধ্যযুগে-
দেহের আরাম দিতে গিয়ে মোরা বিদ্বানের জন্ম দিতে পারি নাই
অনুভব করিয়াছি- পৃথিবীতে ঢের নদী আছে
(আজ মনে হয় পীত স্ফীত মুখ বগলার কুলোর বাতাস)
অনুভব করিয়াছি একদিন- কোথাও মুকুর আছে-
সেইখানে মুখ দেখে নিলে
অস্তগিরির পড়ন্ত সূর্যকে- ব্যথা নয়- অমোঘ ইশারা ব’লে মনে হবে
যে সীমাহীন কৌম নীলিমার।

তারপর মনে হ’ল স্ফীত। স্ফীতস্তন দানবীর স্যাডিজম
যেইখানে মুকুরের বিভা ছিল?
সেইখানে অবোধ ফাটলে বিচূর্ণ হয়ে
গ্রাম গ্রামান্তের মূঢ় সূতিকাঘরের সদ্যঃপাতি শিশুদের মতো
লক্ষ লক্ষ কাচের কণিকা
শতাব্দীর ছবি ধ’রে আছে আজ।

আমরা মুকুর তবু গড়িব না আর
মুকুরের আভা ছিল?-
আমাদের বিশ্বাসের স্বাদ বহুদিন বেঁচে থেকে হয়ে গেছে কৃমিঘন
এই পৃথিবীতে ঢের নদী ছিল একদিন (বিশাখা, শতদ্রু, রাভী, রেবা, তাপ্তি)
সেইখানে শুষ্ক খাদে- বালুর ভিতরে ক্যাম্পে ব’সে থেকে সারাদিন
আমরা দেখিতে আছি বুনোহাঁস সূর্যবিম্বের দিকে উড়ে যেতে-যেতে
হয়ে গেল স্ফটিকের মতো আলো- লাল মরু, নীল জল
তবুও মৈথুন, ভয়, অসময়- শাবকের তরে গুণাগার রেখে মৃত্যু।

এইসব আধোবিস্মৃতির দেশ; মাথার উপরে নীল বায়ুর ভিতরে
তবু এরা পরম্পরা
আমাদের দ্রুত মৃত্যু দ্রুততম ব্যক্তির, শ্লথ মৃত্যু মন্থরের
ব্যক্তি শুধু, মানবিক কোনও সংঘটন নয়।
কারা আলো আর অন্ন রেখে গেছে
অন্ধকার গুমোটের রাত দেখে?

জল রেখে গেছে? ক্ষুৎপিপাসায় কামুকের মতো দেহ প্রশ্নপূর্ণ করে ফেলে
আকাশ এসেছে (শুধু) নেমে আমাদের কাঁধের উপরে- নির্বান্ধব শবের মতন
আমাদের ভারবাহী উট জেনে
আমাদের শেষযাত্রা এইবার আত্তিলার অধিকৃত পৃথিবীর দ্রাঘিমায়
উত্তোলিত গ্রীবা নিয়ে অভিভূত বায়ু-জন্তুদের মতো
যেন এক নিঃসংশয় যোজনায়।

আমাদের ট্যাঁক থেকে কয়েকটা মর্মরের ডিম বালুর উপরে খ’সে গেল
উটের বিষ্ঠার নীচে
মৃত বেদুইনদের নিষ্ঠাহীন চোয়ালের ফাঁপরে বিষম খেয়ে ডুবে গেল;
ডুবে যাক।
তবু, আমাদের তরে এই সব বুদ্ধমূর্তি আজও লোল, লীলাময়-
আজও কৃকলাস ডিম-
আমরা মুকুর, তবু, গড়িতে পারি না আর।

 

যদিও রয়েছি বেঁচে । জীবনানন্দ দাশ । অপ্রকাশিত জীবনানন্দ,২০১৫

 

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পূর্বপুরুষগণ বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর(বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) পরগণার কুমারভোগ নামক স্থানে “গাওপারা” গ্রামের নিবাসী ছিলেন যা পদ্মায় বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে৷ স্থানটি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত৷

তার পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৩৮-৮৫) বিক্রমপুর থেকে বরিশালে স্থানান্তরিত হন৷সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন৷ তিনি বরিশালে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তার মানবহিতৈষী কাজের জন্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন৷

 

Leave a Comment