সহসা শিথিল হয়ে গেল । জীবনানন্দ দাশ । পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থ,২০১২

সহসা শিথিল হয়ে গেল কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশ এর পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থের ১৪তম খণ্ডে রচিত। যা ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। গৌতম মিত্র ও ভূমেন্দ্র গুহ-এর সাথে যৌথ সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়। কবির অগ্রন্থিত কবিতাবলি নিয়ে প্রকাশিত কবিতা সংকলনগুলোর একটি হলো পাণ্ডুলিপি। এই গ্রন্থটি মোট ১৪টি খণ্ডে বিভক্ত রয়েছে।

 

সহসা শিথিল হয়ে গেল । জীবনানন্দ দাশ । পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থ,২০১২

 

সহসা শিথিল হয়ে গেল

কবিতা: সহসা শিথিল হয়ে গেল
কবির নাম: জীবনানন্দ দাশ
কবি: জীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থের নাম: পাণ্ডুলিপির কবিতা

 

সহসা শিথিল হয়ে গেল । জীবনানন্দ দাশ । পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থ,২০১২

 

‘সহসা শিথিল হয়ে গেল’ যদি ভাবি
তা হলে মনের ভুলে গেঁজে আছে ঢের দিন থেকে।
বীতপুরুষের উক্তি চারি-দিকে কোলাহল ক’রে
থেমে গেছে আজ এই নিসর্গের রমণীয় ভোরে।

খাঁচার ভিতরে ব’সে বিখ্যাত পাখির
এ-রকম দু’-চারটে কথা মনে হয়
অনেক অপূর্ব শব্দ শিখেছে সে নরলোক থেকে
এখন সে-লোকও নেই, নেই আর পাখির হৃদয়

‘স্থবির হতেছে সব, অথবা স্থবির
জন্মের মুহূর্ত থেকে সব
মহান পুরুষ আমি এই সব পাখির নিকটে
তবুও আমার চিন্তা ওরা কি করেছে অনুভব?’

উক্তি করি সাদা সাধারণ বেগে- সহৃদয় অনুভাবনায়
প্রতিধ্বনি ক’রে যায় ওরা
লোহা’র শিকের পিছে- ঘরে আর কারাগারে মাথাগুনতিতে ঠিকই আছে
অপর রকম ভাবে চালালে হয়তো হত পক্ষিরাজ ঘোড়া

গোবি মরুভূর বাঘ হয়ে যেত
আমার হৃদয়ে এক সোনালি সুন্দর বাঘ আছে
হয়তো সৃষ্টির অর্থ ভয়াবহ ব্যাঘ্ৰপনায়;
সেই গাভী আমাদের নিবেদন চায়।

উন্নাস অপাপ মুখে চেয়ে থাকে যে-কোনও সময়
ভেবে-ভেবে পেয়ে গেছি বিমর্ষ বিশ্বাস
সেই করুণার থেকে রাষ্ট্রিকীর যৌবন পেরুলে
তবু সে শিশুও নয়- এখনও প্রশান্ত গর্ভবাস।

প্রাচী’র প্রবীণ জ্ঞানী এই কথা ভেবে
অজাত শিশুর দিকে ধ্রুব তারার আলোয়
যাত্রা করে মীমাংসার দণ্ড হাতে নিয়ে
হয়তো তবুও শিশু যেতেছে বুড়িয়ে

সিন্ধুস্থানে নেমে আসে হয়তো স্বস্তিক, কাস্তে সচ্ছল হিজাজ
অথবা হবে না কিছু আজ
নচেৎ রক্তের নদী বয়ে গেলে- দু’এ আর দু’এ মিলে চারে
সেই নদী বয়ে যেতে পারে।

 

সহসা শিথিল হয়ে গেল । জীবনানন্দ দাশ । পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থ,২০১২

 

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পূর্বপুরুষগণ বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর(বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) পরগণার কুমারভোগ নামক স্থানে “গাওপারা” গ্রামের নিবাসী ছিলেন যা পদ্মায় বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে৷ স্থানটি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত৷

তার পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৩৮-৮৫) বিক্রমপুর থেকে বরিশালে স্থানান্তরিত হন৷সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন৷ তিনি বরিশালে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তার মানবহিতৈষী কাজের জন্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন৷

 

Leave a Comment