অতিব্যয়িতা কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশ এর পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থের ১৪তম খণ্ডে রচিত। যা ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। গৌতম মিত্র ও ভূমেন্দ্র গুহ-এর সাথে যৌথ সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়। কবির অগ্রন্থিত কবিতাবলি নিয়ে প্রকাশিত কবিতা সংকলনগুলোর একটি হলো পাণ্ডুলিপি। এই গ্রন্থটি মোট ১৪টি খণ্ডে বিভক্ত রয়েছে।
অতিব্যয়িতা কবিতা
কবিতা: অতিব্যয়িতা কবিতা
কবির নাম: জীবনানন্দ দাশ
কবি: জীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থের নাম: পাণ্ডুলিপির কবিতা
যেখানে রয়েছে ঘাস ঘিরে এক স্বার্থহীন বন
সেইখানে ফাল্গুনের নদীর মতন
জলের ভিতর থেকে উঠে এক মেয়ে
আমার ঘাড়ের ‘পরে হাত রেখে ব’লে গেল: জন-সাধারণ
তুমিও তো এক জন- এমন জনতা
আপাদমস্তক ঘিরে রেখেছে তোমাকে
আগুনের সিংহদ্বারে দেখা হল তাই
কথা না ফুরাতে মনে হয় যেন তাকে
কোথাও দেখেছি যেন তবে-
পৃথিবীর বারবেলা কাত ক’রে আমরা-যে নাগর
চলেছে সে মাথার চুলের ‘পরে চুমো দিয়ে তবুও পায়ের নিচে নেমে
একটিই পরিশ্রম কেটে তবু চ’লে যায় মানুষের সাধে পূর্বাপর
সে মানুষ শেয়াল শকুন শনি ভাঁড়
অথবা পাত্ৰাধার তৈল হয়ে তবু তৈলাধার
পাত্র হয়ে থেকে যেতে পারে
মর্মান্তিক রাজকন্যাদের সাথে পাশা
খেলে মৃত যুগ থেকে পুনরায় তুলে নিতে পারে পরিভাষা
তার পর যখন সে পশ্চিমের দিকে
ভোরের সূর্যের খোঁজে সিংহ-দ্বার দিয়ে
চ’লে যায়- প্রামাণিক পুরুষেরা চ’লে গেছে ব’লে
আমি জন-সাধারণ চেয়ে দেখে মেয়েটিকে, রয়েছে দাঁড়িয়ে।
মাথার উপরে সিংহ-দ্বার
আড়া-আড়ি দু’টো তরবার
কিংবা আড়া-আড়ি
জন আর নারী
যে-সব বাণিজ্য যুদ্ধ ধূসর হয়েছে পৃথিবীতে
ছবির মতন তারা ফুটে আছে সুমুখের বৃহৎ আরশিতে
অনেক গভীর রক্ত লেগে আছে নারীর শেমিজে
তাহার মাথার চুল ততোধিক শিশিরের মৃদুতায় ভিজে
এখন সূর্যের প্রাণে তাই আর নেই কোনও ভয়
হৃদয় স্মরণে এলে দিক কিছু নয়- কিছু পশ্চিম প্রান্তরে সূর্যোদয়
হয়ে যায়- হয়ে গেছে ব’লে
সাদা সাধারণ শব্দ জেগে ওঠে যেন পৃথিবীতে ভোর হলে।
জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পূর্বপুরুষগণ বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর(বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) পরগণার কুমারভোগ নামক স্থানে “গাওপারা” গ্রামের নিবাসী ছিলেন যা পদ্মায় বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে৷ স্থানটি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত৷
তার পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৩৮-৮৫) বিক্রমপুর থেকে বরিশালে স্থানান্তরিত হন৷সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন৷ তিনি বরিশালে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তার মানবহিতৈষী কাজের জন্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন৷