প্রতিতী কবিতা – সাতটি তারার তিমির কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ) কলকাতা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই কাব্যগ্রন্থের বিরুদ্ধে দুবোর্ধ্যতার অভিযোগ ওঠে।
প্রতিতী কবিতা
কবিতা:প্রতিতী কবিতা
কবির নাম: জীবনানন্দ- দাশ
কবি: জীবনানন্দ -দাশ
কাব্যগ্রন্থের নাম:সাতটি তারার তিমির কাব্যগ্রন্থ
বাতাবীলেবুর পাতা উড়ে যায় হাওয়ায়— প্রান্তরে,—
সার্সিতে ধীরে-ধীরে জলতরঙ্গের শব্দ বাজে ;
একমুঠো উড়ন্ত ধূলোয় আজ সময়ের আস্ফোট রয়েছে ;
না হলে কিছুই নেই লবেজান লড়ায়ে জাহাজে।
বাইরে রৌদ্রের ঋতু বছরের মতো আজ ফুরায়ে গিয়েছে ;
হোক না তা ; প্রকৃতি নিজের মনোভাব নিয়ে অতীব প্রবীণ ;
হিসেব বিষণ্ণ সত্য র’য়ে গেছে তার ;
এবং নির্মল ভিটামিন।
সময় উচ্ছিন্ন হ’য়ে কেটে গেলে আমাদের পুরোনো প্রহের
জীবনস্পন্দন তার রূপ নিতে দেরি ক’রে ফেলে,—
জেনে নিয়ে যে যাহার স্বজনের কাজ করে না কি—
পরার্থের কথা ভেবে ভালো লেগে গেলে।
মানুষেরই ভয়াবহ স্বাভাবিকতার সুর পৃথিবী ঘুরায় ;
মাটির তরঙ্গ তার দু–পায়ের নিচে
আধোমুখে ধ্ব’সে যায় ;— চারিদিকে কামাতুর ব্যাক্তিরা বলে :
এ–রকম রিপু চরিতার্থ ক’রে বেঁচে থাকা মিছে।
কোথাও নবীন আশা র’য়ে গেছে ভেবে
নীলিমার অনুকল্পে আজ যারা সয়েছে বিমান,—
কোনো এক তনুবাত শিখরের প্রশান্তির পথে
মানুষের ভবিষ্যৎ নেই— এই জ্ঞান
পেয়ে গেছে ;— চারিদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন নেশন প’ড়ে আছে,
সময় কাটায়ে গেছে মোহ ঘোচাবার
আশা নিয়ে মঞ্জুভাষা, দোরিয়ান গ্রীস,
চীনের দেয়াল, পীঠ, পেপিরাস, কারারা-পেপার।
তাহারা মরেনি তবু ;— ফেনশীর্ষ সাগরের ডুবুরির মতো
চোখ বুজে অন্ধকার থেকে কথা-কাহিনীর দেশে উঠে আসে ;
যত যুগ কেটে যায় চেয়ে দেখে সাগরের নীল মুরুভূমি
মিশে আছে নীলিমার সীমাহীন ভ্রান্তিবিলাসে।
ক্ষতবিক্ষত জীব মর্মস্পর্শে এলে গেলে— তবুও হেঁয়ালি;
অবশেষে মানবের স্বাভাবিক সূর্যালোকে গিয়ে
উত্তীর্ণ হয়েছে ভেবে— ঊনিশশো বিয়াল্লিশ সাল।
‘তেতাল্লিশ’ পঞ্চাশের দিগন্তরে পড়েছে বিছিয়ে।
মাটির নিঃশেষ সত্য দিয়ে গড়া হয়েছিলো মানুষের শরীরের ধুলো :
তবুও হৃদয় তার অধিক গভীরভাবে হ’তে চায় সৎ;
ভাষা তার জ্ঞান চায়, জ্ঞান তার প্রেম,—ঢের সমুদ্রের বালি
পাতালের কালি ঝেড়ে হ’য়ে পড়ে বিষণ্ণ, মহৎ।
আরও দেখুন:
1 thought on “প্রতিতী কবিতা – জীবনানন্দ দাশ ( সাতটি তারার তিমির কাব্যগ্রন্থ , ১৯৪৮)”