অঘ্রান কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশ এর পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থের ১০ম খণ্ডে রচিত। যা ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। গৌতম মিত্র ও ভূমেন্দ্র গুহ-এর সাথে যৌথ সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হয়। কবির অগ্রন্থিত কবিতাবলি নিয়ে প্রকাশিত কবিতা সংকলনগুলোর একটি হলো পাণ্ডুলিপি। এই গ্রন্থটি মোট ১৪টি খণ্ডে বিভক্ত রয়েছে।
অঘ্রান কবিতা
কবিতা: অঘ্রান কবিতা
কবির নাম: জীবনানন্দ দাশ
কবি: জীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থের নাম: পাণ্ডুলিপির কবিতা
অঘ্রান-খেতের দিকে চেয়ে থেকে টের পাই ওখানে এখন
নীরব কাস্তে নাচে স্তব্ধ কৃষকের হাতে- বিকেলের আশ্চর্য আলোয়
পশ্চিমে ফিরোজা সূর্য টের পায় জলের রঙের ইঁদুরেরা
নিজেদের নীড় ছেড়ে চ’লে যায় সম্মুখীন ফসলের দিকে
ফড়িঙেরা স’রে যায় আধেক কাস্তের শব্দে ভয় পেয়ে
ততোধিক মুগ্ধ হয়ে হেমন্তের সংস্কারে- বায়ুর ভিতরে
উবে যায়- যেন তারা সবুজ শরীর নিয়ে জন্মেছিল এক দিন
অনুভব করা যায় এখন বিকেলবেলা সমস্ত শূন্যের দিকে চেয়ে
যে-পাখি দিনের কাজে উড়ে গেছে- খেতের ভিতরে
নিজের কুলায় রেখে তাহার ধবল, নীল (ফুটফুটে) ডিম
শিশুদের লজেঞ্চুসের মতো করুণায় আবিষ্কৃত হয়
চাষী নয়- অন্য কারু চোখের নিকটে
এই সব ব্যাপারের পরে গোল সূর্যের নিরুত্তেজ, প্রবীণ আলোর
রঙ পড়ে- কাস্তের শব্দ ক্রমে শূন্য হয়ে যায়।
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক৷ তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম৷ তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মিলে৷ জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।
মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন৷গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন৷